মেলবোর্ন, ২৯ ফেব্রুয়ারি - নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচ হেরে আগেই ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। কার্যত শেষ হয়ে গিয়েছিল সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনা। তবু আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার জন্য বাকি দুই ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিতলেই হতো সালমা খাতুনের দলকে। সে লক্ষ্যে দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষপর্যন্ত আর জেতা হলো না বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের। শক্তিশালী নিউজিল্যান্ডকে মাত্র ৯১ রানে আটকে ফেলেও, পাওয়া হয়নি জয়। নিজেদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে ৭৪ রানে, হারতে হয়েছে ১৭ রানের ব্যবধানে। এই ম্যাচের জয়ের লক্ষ্যে নিজেদের একাদশে চারটি পরিবর্তন এনেছিল বাংলাদেশ। আগের ম্যাচ থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল শামীমা সুলতানা, সানজিদা ইসলাম, নাহিদা আক্তার ও খাদিজা তুল কুবরাকে। প্রথমবারের একাদশে নেয়া হয় আয়েশা রহমান শুকতারা, শবনম মোস্তারি, রিতু মণিকে, ফেরানো হয় পান্না ঘোষকে। এ চারজনের মধ্যে কেবল বোলার মতো পারফরম্যান্স করে দেখিয়েছেন মিডিয়াম পেস বোলিং অলরাউন্ডার রিতু মণি। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে মাত্র ১৮ রান খরচায় নিয়েছেন ৪ উইকেট। যা কি না চলতি বিশ্বকাপে এখনও সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড। এছাড়া বাকি তিনজনই হতাশ করেছেন দলকে। মেলবোর্নের জাংশন ওভালে ৯২ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা তেমন ভালো হয়নি। মারমুখী ভঙ্গিতে শুরু করলেও নিজের ইনিংস বেশি বড় করতে পারেননি দলের একমাত্র বাঁহাতি ব্যাটসম্যান মুর্শিদা খাতুন। দুই চারের মাত্র ১৪ বলে ১১ রান করে ফিরে গেছেন সাজঘরে। পরে রান করতে পারেননি চলতি বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা আরেক ওপেনার আয়েশা রহমানও। তিনি ৮ বল খেলে সাজঘরে ফিরে যান মাত্র ১ রান করে। তৃতীয় উইকেটে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নিগার সুলতানা জ্যোতি ও বল হাতে বাজিমাত করা রিতু মণি। কিন্তু ইনিংসের দশম ওভারে অ্যানা পিটারসনের বলে সুইপ করতে গিয়ে ব্যাটে ওপরের কানায় লেগে বল আঘাত হানে জ্যোতির ঘাড়ের নিচে। ফলে তাকে চলে যেতে হয় আহত অবসর হয়ে। দলের রান তখন ৯.২ ওভারে ২ উইকেটে ৩১। জয়ের জন্য করতে হতো আরও ৬১ রান। জ্যোতির এভাবে ফিরে যাওয়াটাই যেনো বড় ধাক্কা হয়ে আসে বাংলাদেশের জন্য। সে ওভারেই রানআউটে কাঁটা পড়েন দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ফারজানা হক (৩ বলে ০)। এক ওভার একই ভুলে সাজঘরে ফিরতে হয় রিতু মণিকেও (২২ বলে ১১)। হতাশ করেছেন দলের সেরা খেলোয়াড় রোমানা আহমেদ। ইনিংসের ১৩তম ওভারে তিনি সাজঘরে ফিরে যান ৮ বল খেলে মাত্র ২ রান করে। বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন ১২.১ ওভারে ৫ উইকেটে ৪০ রান। কার্যত তখনই শেষ হয়ে যায় জয়ের আশা। এরপর ব্যর্থতার মিছিলে নাম লেখান শবনম মোস্তারি (১১ বলে ৬), ফাহিমা খাতুন (১১ বলে ৭), জাহানারা আলম (১ বলে ০) এবং সালমা খাতুন (৭ বলে ৪)। তবে শেষদিকে নেমে লড়াই করেন জ্যোতি। এগার নম্বরে নামা পান্না ঘোষের সঙ্গে যোগ করেন ১৫ রান। জ্যোতির ব্যাট থেকে আসা ২৬ বলে ২১ রানের ইনিংসেই জয়ের ব্যবধানটা ১৭ রানে নামাতে পেরেছে বাংলাদেশ। পান্না অপরাজিত ছিলেন ৮ বলে ৫ রান করে। এর আগে নিউজিল্যান্ডের শুরুটা ছিলো দারুণ। বরাবরের মতোই বড় সংগ্রহের পথে এগুচ্ছিল তারা। কিন্তু বাঁধ সেধেছেন ডানহাতি মিডিয়াম পেসার রিতু মণি। তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে মাত্র ৩৬ রানে নিউজিল্যান্ডের শেষের ৮ উইকেট তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং করেছেন রিতু। পাঁচ নম্বরে বোলিং শুরু করে ৪ ওভারের স্পেলে ১৮ রান খরচায় নিয়েছেন ৪টি উইকেট। এছাড়া অধিনায়ক সালমা খাতুন ২.২ ওভারে ৭ রানের বিনিময়ে ঝুলিতে পুরেছেন ৩ উইকেট। বাংলাদেশের বিপক্ষে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কিউই নারীরা। এখনও পর্যন্ত দুই ম্যাচ খেলে একটি করে জয়-পরাজয় পেয়েছে তারা। আজ (শনিবার) বাংলাদেশের বিপক্ষে বড় সংগ্রহ দাঁড় করিয়ে দ্বিতীয় জয় তুলে নেয়ার পরিকল্পনাই করেছে তারা। সে লক্ষ্যে দুই ওপেনার রাচেল প্রায়েস্ট ও অধিনায়ক সোফি ডিভাইন উদ্বোধনী জুটিতে যোগ করেন ৩৬ রান। দুজনকেই সাজঘরের পথ দেখান টাইগ্রেস অধিনায়ক সালমা। সোফি ১২ এবং রাচেল আউট হন ২৫ রান করে। বিনা উইকেটে ৩৬ থেকে ২ উইকেটে ৪০ রানে পরিণত হয় নিউজিল্যান্ডের ইনিংস। তৃতীয় উইকেটে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালান সুজি বেটস এবং ম্যাডি গ্রিন। দুজন মিলে যোগ করেন আরও ২৬ রান। দলীয় সংগ্রহ ১২.২ ওভারে ২ উইকেটের বিনিময়ে ৬৬ রান। তখনই ১৫ রান করা সুজি বেটসকে সরাসরি বোল্ড করে শুরু হয় রিতু মণির তাণ্ডব। পরের ওভারে আরেক সেট ব্যাটসম্যান গ্রিনকে ১১ রানে ফেরান অলরাউন্ডার রোমানা আহমেদ। নিউজিল্যান্ডের বাকি সাত ব্যাটসম্যানের কেউই যেতে পারেননি দুই অঙ্কে, তবে কেউই আবার ফেরেননি শূন্য রানেও। অর্থাৎ সবাই রানের খাতা খুললেও ফিরে গেছেন ১০ রানের আগেই। এর মধ্যে ১৭তম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন রিতু। ফেরান অ্যানা পিটারসন এবং অ্যামেলিয়া কারকে। পরে ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে লিয়া তাহুহুকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে কিউই ইনিংসের সমাপ্তি টানেন সালমা। রিতু-সালমার পাশাপাশি বল হাতে ২টি উইকেট নিয়েছেন রোমানাও। সূত্র : জাগো নিউজ এন এইচ, ২৯ ফেব্রুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/3ciqreQ
https://ift.tt/eA8V8J