দলবদলে রেকর্ড গড়া দশ ফুটবলার

বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসি ক্লাব ছাড়তে চান। বার্সাকে সেকথা জানিয়েও দিয়েছেন। মেসির ওই ঘোষণা আন্তর্জাতিক ক্রীড়া অঙ্গনে বোমার মতো ফেঁটেছে। বার্সেলোনা ভক্তরা, মেসি ভক্তরা বিষয়টি মানতে পারছেন না। কারণ বার্সেলোনা এবং মেসি সমর্থক হয়ে গেছেন। মেসির এই দল বদলের ইচ্ছা অবাক করেছে সবাইকে। তার দলবদল এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে ফুটবলে আগেই ঘটে গেছে অবাক করার মতো কিছু দলবদল। পেলে: সর্বকালের সেরা ফুটবলার পেলে এবং তার ক্লাব সান্তোস সমর্থক হয়ে গিয়েছিল। পেলে সান্তোসে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফুটবল খেলেছেন ১৮ বছর। তার ফুটবল শিক্ষাও সান্তোসে। সেই পেলেও ক্যারিয়ারের সাহ্নানে সান্তোস ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন নিউইয়র্ক কসমোসে। তিনি ক্লাব ফুটবলে ৫২৮ গোল করেছেন বলে হিসেব পাওয়া যায়। যদিও বিভিন্ন মাধ্যম দাবি করে, তার গোল সংখ্যা হাজারের উপরে। কিন্তু তার সঠিক হিসেব নেই। পেলে ১৯৫৬-১৯৭৪ পর্যন্ত খেলেছেন সান্তোসে। ১৯৭৫-১৯৭৭ মৌসুম খেলেছেন নিউইয়র্ক কসমোসে। ইয়োহান ক্রুইফ: ডাচ এই ফুটবলারকে নিয়ে আয়াক্সের চেয়ে সম্ভবত বার্সেলোনারই গর্ব বেশি। বার্সার লিজেন্ডদের একজন তিনি। ফুটবলার কিংবা কোচ হিসেবে। তবে তিনি মূলত আয়াক্সেরই। ডাচ ক্লাবটিতে ১৯৬৪-১৯৭৩ পর্যন্ত সাত মৌসুমে ২৬০ ম্যাচ খেলে ১৯০ গোল করেছেন। জিতেছেন ব্যালন ডিঅর। এরপর চলে আসেন বার্সায়। সেখানেও জেতেন ব্যালন ডিঅর। খেলেন পাঁচ মৌসুম। পেলের সময়কার এই ফুটবলারের দলবদলকে ভক্তরা মানতে পারেননি। কারণ আয়াক্সের সমর্থন হয়ে উঠেছিলেন তিনি। লুইস ফিগো: পর্তুগিজ এই মিডফিল্ডারকে এখনও বিশ্বাসঘাতক হিসেবেই আখ্যা দেয় বার্সেলোনা ভক্তরা। এমনকি বার্সার হর্তাকর্তারাও। স্পোর্টিং লিসবন থেকে বার্সায় এসে পাঁচ মৌসুম খেলেন তিনি। ২০০০ সালে সবাইকে অবাক করে চলে যান রিয়াল মাদ্রিদে। সেই থেকে অপরাধী তিনি। তবে রিয়ালে ক্যারিয়ার শেষ করতে পারেননি ফিগো। ২০০৫ সালে যান ইন্টার মিলানে। সেখানেও খেলেন পাঁচ মৌসুম। রোনালদো নাজারিও: তখন রিয়াল-বার্সা, ম্যানইউ-লিভারপুল, ইন্টার মিলান-এসি মিলানের মাঠের দ্বন্দ্বটা প্রবল। এক ক্লাবে নাম করা ফুটবলারের অন্য ক্লাবে যাওয়া পাপ। সেই বাধাটা সম্ভবত লুইস ফিগোই ভাঙেন। পরে বেকহ্যাম, কাকা, রিভালদো, রোনালদোরা তারই অংশ হন। ব্রাজিলের রোনালদো এক মৌসুম বার্সায় খেলে চলে যান ইন্টার মিলানে। এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু ২০০২ সালে তিনি নাম লেখান রিয়ালে। বার্সার কাছে বনে যান ভিলেন। এখনও তিনি কাতালানদের কাছে ভিলেনই। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো: ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে রোনালদো খেলেছেন ছয় মৌসুম। কম সময় তো নয়। ওই সময়ে রেডসদের হয়ে লিগ, চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন। হাতে তুলেছেন ব্যালন ডির। ম্যানইউয়ের জৌলুসও তখন কম নয়। ওমন একটা ক্লাবে ক্যারিয়ার শেষ করতে এর বেশি উৎসাহের দরকার পড়ে না। কিন্তু রোনালদো ভক্তদের হতাশ করে চলে আসেন রিয়াল মাদ্রিদে। সিআরসেভেনের রিয়ালের সঙ্গে নয় বছরের সম্পর্ক ছিন্ন হওয়াও কম অবাক করার ছিল না। কার্লোস তেভেজ: যাযাবর কার্লোস তেভেজ ক্লাব বদলেছেন নয়বার। ক্লাব বদলানোর লড়াইয়ে পক্ষ-বিপক্ষ দেখেননি তিনি। দুই মৌসুম ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে থেকে ২০০৯ সালে তিনি তাই পাড়ি জমান নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানসিটিতে। সেখানে তিন বছর থেকে আবার যান জুভেন্টাসে। এরপর আর্জেন্টিনা-চীন ঘুরে সেই বোকা জুনিয়র্সেই ফিরেছেন তিনি। ৩৬ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন এখনও। ডেভিড বেকহ্যাম: বাঁকানো শটের জাদুকর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কিংবদন্তি। রিয়াল মাদ্রিদেও। ইংলিশ ক্লাবটিতে তিনি ছিলেন ১১ মৌসুম। এরপর ২০০৩ সালে যখন রিয়ালে আসলেন ইংলিশ ফুটবল ভক্তরা তার ওপর বেজায় খ্যাপা। রিয়াল তখন বছর বছর এমন অবাক করা চুক্তি করাতে লাগলো। ২০০০ সালে ফিগো, পরের বছর জিদান। এরপর রোনালদো লিমা তো পরের বছর বেকহ্যাম। তখন অহরহ ট্রান্সফার মার্কেকটে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছে রিয়াল। রিও ফার্নান্দেজ: লিডস ইউনাইটেডের তখন খারাপ সময়। ২০০১ সালে আর্থিক টানাপোড়েন। সর্বোচ্চ পর্যায়ের লিগ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে পড়ে যাওয়া। ওই দলে রিও ফার্নান্দেজের মতো ডিফেন্ডার থাকবেন না, এটাই তো হওয়ার কথা। তাই বলে এতো ক্লাব থাকতে ম্যানইউতে যাবেন রিও। লিডস ভক্তরা মানতে পারেননি এটি। কারণ লিডসের সঙ্গে ম্যানইউয়ের আছে দৌরত্ম্য। রিও পরে ম্যানইউতে খেলেছেন ১২ বছর। রেডসদের কিংবদন্তি ডিফেন্ডার তিনি। আরও পড়ুন:চ্যাম্পিয়নস লিগের সেরা গোল রোনালদোর ফার্নান্দো তোরেস: দীর্ঘ ক্যারিয়ার ফার্নান্দো তোরেসের। অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদে ছয় মৌসুম খেলে তিনি যান লিভারপুলে ২০০৭ সালে। তাতে কেউ দোষ ধরেনি। তার দোষ লিভারপুল থেকে চেলসি যাওয়ায়। কারণটা অনুমেয়। ইংলিশ লিগে লিভারপুল-চেলসি দৌরাত্ম্য। লিভারপুলের পাগলা ভক্তরা এটা সহজে মেনে নেয়নি। জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ: সুইডিস এই স্ট্রাইকারের দোষটা ধরতে গেলে হবে না। ক্যারিয়ারে তিনি খেলেননি কোথায়! আয়াক্স, ইন্টার, জুভেন্টাস, বার্সা, এসি মিলান, পিএসজি, ম্যানইউ। আর বাদ থাকে কী! ইউরোপের শীর্ষ পর্যায়ের অধিকাংশ শীর্ষ ক্লাবে খেলতে গেলে ভুল-ভ্রান্তি কিছু হবে। সেটাই তো স্বাভাবিক। ইব্রার দলবদলের প্রথম দোষ জুভেন্টাস থেকে ইন্টারে যাওয়া। মাঠের দ্বন্দ্ব এই দুই ক্লাবের বেশ পুরনো। পরের ভুল ইন্টার থেকে বার্সা যাওয়া। বার্সা তাকে আবার মিলানের কাছে ধারে ছেড়ে দিয়ে আরেক অন্যায় করিয়েছে। ইব্রার ব্যাপারটা ভক্তদের সম্ভবত সয়ে গেছে। সূত্র: সমকাল এমএ/ ২৮ আগস্ট

from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/32yDc0t
https://ift.tt/eA8V8J

Post a Comment